০১:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
কার্গো ভিলেজের আগুন

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: সাফল্য ও সন্দেহের আবর্তে

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় সাফল্যের খবর আসার মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) আনুমানিক দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে এই আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড কোটি টাকার মালামাল পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দাবি করেছে। তবে, এই অগ্নিকাণ্ডের সময়কাল ও প্রেক্ষাপট গভীর উদ্বেগ ও নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের মাত্র কয়েকদিন আগে, গত ১২ অক্টোবর, বেবিচক এক বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি, ইউকে) পরিচালিত বিমানবন্দর মূল্যায়নে বাংলাদেশের আকাশপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অসাধারণ সাফল্যের কথা জানায়। এই মূল্যায়নে:

  • শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: সামগ্রিক মূল্যায়নে ৯৩ শতাংশ এবং কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়নে ১০০ ভাগ নম্বর অর্জন করে।
  • সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: একই মূল্যায়নে সামগ্রিকভাবে ৯৪ শতাংশ এবং কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়নে ১০০ ভাগ নম্বর লাভ করে।

ডিএফটি এয়ারপোর্ট অ্যাসেসমেন্ট একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া, যা বিদেশি বিমানবন্দরসমূহের যাত্রী ও কার্গো নিরাপত্তা মানদণ্ড এবং যুক্তরাজ্যের চাওয়া অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোর বাস্তবায়ন পরীক্ষা করে। বেবিচক এই অর্জনকে বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও সক্ষমতার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেছিল, যা বিদেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আস্থা বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কমাবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কার্গো স্ক্রিনিং উদ্বেগের কারণে যুক্তরাজ্য সরাসরি ঢাকাগামী কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এরপর ২০১৭ সাল থেকে আধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) যুক্ত করার মাধ্যমে নিরাপত্তা মান উন্নত করা হয়।

অভূতপূর্ব নিরাপত্তার স্বীকৃতি পাওয়ার অব্যবহিত পরেই কার্গো ভিলেজ পুড়ে যাওয়ায়, ঘটনাটিকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই অগ্নিকাণ্ডের একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন যে, শাহজালালের আগুনের কারণ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতের জননিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য এই তদন্ত অপরিহার্য। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং মিরপুরের পোশাক কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ‘উদ্বেগজনক বৃদ্ধি’-র দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এনসিপি নেতা সারজিস আলম ফেসবুকে প্রকাশিত তাঁর মন্তব্যে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখতে নারাজ। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, এগুলো “স্বৈরাচারের দোসরদের দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ।” তিনি প্রচলিত ‘তদন্ত কমিটির নাটক’ বাদ দিয়ে এর পেছনের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানান।

বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেবল কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতিই করেনি, বরং বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাম্প্রতিক অর্জনকে ঘিরে গভীর সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন দেশের বিমান নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি মিলল, অন্যদিকে তেমনি সেই নিরাপত্তার কেন্দ্রস্থলে অগ্নিদগ্ধ হলো গুরুত্বপূর্ণ কার্গো এলাকা। জনগণের আস্থা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রক্ষার্থে, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এই অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা গাফিলতি আছে কিনা, তা দ্রুত একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের সিরিজ প্রত্যাহারে আফ্রিদির শান্ত থাকার আহ্বান ও সতর্কবার্তা

কার্গো ভিলেজের আগুন

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: সাফল্য ও সন্দেহের আবর্তে

প্রকাশিত : ১০:৩২:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় সাফল্যের খবর আসার মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) আনুমানিক দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে এই আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড কোটি টাকার মালামাল পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দাবি করেছে। তবে, এই অগ্নিকাণ্ডের সময়কাল ও প্রেক্ষাপট গভীর উদ্বেগ ও নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের মাত্র কয়েকদিন আগে, গত ১২ অক্টোবর, বেবিচক এক বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি, ইউকে) পরিচালিত বিমানবন্দর মূল্যায়নে বাংলাদেশের আকাশপথের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অসাধারণ সাফল্যের কথা জানায়। এই মূল্যায়নে:

  • শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: সামগ্রিক মূল্যায়নে ৯৩ শতাংশ এবং কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়নে ১০০ ভাগ নম্বর অর্জন করে।
  • সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: একই মূল্যায়নে সামগ্রিকভাবে ৯৪ শতাংশ এবং কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়নে ১০০ ভাগ নম্বর লাভ করে।

ডিএফটি এয়ারপোর্ট অ্যাসেসমেন্ট একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া, যা বিদেশি বিমানবন্দরসমূহের যাত্রী ও কার্গো নিরাপত্তা মানদণ্ড এবং যুক্তরাজ্যের চাওয়া অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোর বাস্তবায়ন পরীক্ষা করে। বেবিচক এই অর্জনকে বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও সক্ষমতার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেছিল, যা বিদেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আস্থা বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি কমাবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কার্গো স্ক্রিনিং উদ্বেগের কারণে যুক্তরাজ্য সরাসরি ঢাকাগামী কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এরপর ২০১৭ সাল থেকে আধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) যুক্ত করার মাধ্যমে নিরাপত্তা মান উন্নত করা হয়।

অভূতপূর্ব নিরাপত্তার স্বীকৃতি পাওয়ার অব্যবহিত পরেই কার্গো ভিলেজ পুড়ে যাওয়ায়, ঘটনাটিকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই অগ্নিকাণ্ডের একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন যে, শাহজালালের আগুনের কারণ নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতের জননিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য এই তদন্ত অপরিহার্য। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং মিরপুরের পোশাক কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ‘উদ্বেগজনক বৃদ্ধি’-র দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এনসিপি নেতা সারজিস আলম ফেসবুকে প্রকাশিত তাঁর মন্তব্যে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখতে নারাজ। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, এগুলো “স্বৈরাচারের দোসরদের দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ।” তিনি প্রচলিত ‘তদন্ত কমিটির নাটক’ বাদ দিয়ে এর পেছনের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানান।

বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেবল কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতিই করেনি, বরং বাংলাদেশের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাম্প্রতিক অর্জনকে ঘিরে গভীর সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন দেশের বিমান নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি মিলল, অন্যদিকে তেমনি সেই নিরাপত্তার কেন্দ্রস্থলে অগ্নিদগ্ধ হলো গুরুত্বপূর্ণ কার্গো এলাকা। জনগণের আস্থা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রক্ষার্থে, কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এই অগ্নিকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা গাফিলতি আছে কিনা, তা দ্রুত একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।