০৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
কার্গো ভিলেজের আগুন

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড: ফ্লাইট বন্ধ, ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তা

শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো শাখায় (কার্গো ভিলেজ) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিমানবন্দরটির সামগ্রিক কার্যক্রমে তীব্র স্থবিরতা দেখা দেয়। দুপুর সোয়া ২টায় শুরু হওয়া এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কার্গো শাখায় থাকা কোটি কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় ৭ ঘণ্টার অক্লান্ত চেষ্টায় রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এই দীর্ঘসময় ধরে বিমানবন্দর থেকে সকল প্রকার বিমান ওঠা-নামা বন্ধ থাকায় দেশি ও বিদেশগামী যাত্রী এবং তাদের অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের মধ্যে চরম দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।

অগ্নিকাণ্ডের কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাভাবিক ফ্লাইট শিডিউল সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু আগত ফ্লাইটকে ডাইভার্ট করে চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও এর আশেপাশে বিদেশগামী যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন:

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে আসা এক যাত্রী সিঙ্গাপুরে তার কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সোমবার (২০ অক্টোবর)। রাত ১১টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা থাকলেও, ফ্লাইট বাতিলের কারণে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে চাকরি হারানো বা ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের শঙ্কায় পড়েন তিনি।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে আসা এক যাত্রী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার এমিরেটস ফ্লাইটে দুবাই হয়ে বাহরাইন যাওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তার এজেন্সির মাধ্যমে আগামী ২৪ তারিখের একটি ফ্লাইটে টিকিট বুক করা হয়। যদিও তিনি সাময়িকভাবে পরিবারকে বাড়তি সময় দিতে পারার সান্ত্বনা খুঁজে পান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা এক যাত্রীও একই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তী কোনো ফ্লাইটের টিকিট পাননি। বিমান কর্তৃপক্ষ তাকে পরদিন সকাল ৯টায় একটি নির্দিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করতে বললেও, অফিসের অবস্থান না জানায় তিনি আরও বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। সময়মতো কাজে যোগ দিতে না পারার কারণে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় পড়েন তিনিও।

এদিকে বিদেশ থেকে আসা প্রিয়জনদের নিতে বিমানবন্দরে আগত স্বজনদের দীর্ঘ এবং উৎকণ্ঠাময় সময় পার করতে হয়। ফ্লাইট ডাইভার্ট হওয়ায় বা যাত্রা বাতিল হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছিল না:

দুবাই থেকে ভাই শাহেদ আহমেদকে নিতে তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইট অবতরণের কথা থাকলেও, আগুনের কারণে ফ্লাইটটি দুবাই ফেরত গেছে শুনে তিনি চরম দ্বিধায় পড়েন—ঢাকায় থাকবেন নাকি সিলেট ফিরে যাবেন।

মাদারিপুর থেকে আসা ১৫ বছর বয়সী রাফিয়া তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দুবাই থেকে আসা বাবা জালাল হাওলাদারকে নিতে অপেক্ষায় ছিলেন। বাবার ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে অবতরণের কথা ছিল। দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরা প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তারা অপেক্ষায় বিরক্ত ও হতাশ হয়ে পড়েন।

দীর্ঘ ভোগান্তির পর, রাত ৯টা ৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়। ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট নিরাপদে অবতরণের মাধ্যমে বিমানবন্দরটি আবার সচল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শুধু কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতিই করেনি, বরং বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বারের কার্যক্রমকে কয়েক ঘণ্টার জন্য অচল করে দিয়েছিল। এর ফলে অসংখ্য বিদেশগামী যাত্রী অনিশ্চয়তা ও চাকরি হারানোর আশঙ্কায় পড়েন এবং বিদেশ ফেরত যাত্রীদের স্বজনরা পড়েন উৎকণ্ঠায়। দ্রুত অগ্নি নির্বাপণ এবং ফ্লাইট কার্যক্রম আংশিকভাবে শুরু করা গেলেও, এই ঘটনা বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনার জরুরি নিরাপত্তা প্রটোকল এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

জনপ্রিয়

আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের সিরিজ প্রত্যাহারে আফ্রিদির শান্ত থাকার আহ্বান ও সতর্কবার্তা

কার্গো ভিলেজের আগুন

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড: ফ্লাইট বন্ধ, ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত : ০৯:৫৪:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো শাখায় (কার্গো ভিলেজ) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিমানবন্দরটির সামগ্রিক কার্যক্রমে তীব্র স্থবিরতা দেখা দেয়। দুপুর সোয়া ২টায় শুরু হওয়া এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কার্গো শাখায় থাকা কোটি কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় ৭ ঘণ্টার অক্লান্ত চেষ্টায় রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এই দীর্ঘসময় ধরে বিমানবন্দর থেকে সকল প্রকার বিমান ওঠা-নামা বন্ধ থাকায় দেশি ও বিদেশগামী যাত্রী এবং তাদের অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের মধ্যে চরম দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।

অগ্নিকাণ্ডের কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাভাবিক ফ্লাইট শিডিউল সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু আগত ফ্লাইটকে ডাইভার্ট করে চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও এর আশেপাশে বিদেশগামী যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন:

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে আসা এক যাত্রী সিঙ্গাপুরে তার কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সোমবার (২০ অক্টোবর)। রাত ১১টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা থাকলেও, ফ্লাইট বাতিলের কারণে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে চাকরি হারানো বা ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের শঙ্কায় পড়েন তিনি।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে আসা এক যাত্রী সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার এমিরেটস ফ্লাইটে দুবাই হয়ে বাহরাইন যাওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তার এজেন্সির মাধ্যমে আগামী ২৪ তারিখের একটি ফ্লাইটে টিকিট বুক করা হয়। যদিও তিনি সাময়িকভাবে পরিবারকে বাড়তি সময় দিতে পারার সান্ত্বনা খুঁজে পান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা এক যাত্রীও একই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তী কোনো ফ্লাইটের টিকিট পাননি। বিমান কর্তৃপক্ষ তাকে পরদিন সকাল ৯টায় একটি নির্দিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করতে বললেও, অফিসের অবস্থান না জানায় তিনি আরও বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। সময়মতো কাজে যোগ দিতে না পারার কারণে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় পড়েন তিনিও।

এদিকে বিদেশ থেকে আসা প্রিয়জনদের নিতে বিমানবন্দরে আগত স্বজনদের দীর্ঘ এবং উৎকণ্ঠাময় সময় পার করতে হয়। ফ্লাইট ডাইভার্ট হওয়ায় বা যাত্রা বাতিল হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছিল না:

দুবাই থেকে ভাই শাহেদ আহমেদকে নিতে তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইট অবতরণের কথা থাকলেও, আগুনের কারণে ফ্লাইটটি দুবাই ফেরত গেছে শুনে তিনি চরম দ্বিধায় পড়েন—ঢাকায় থাকবেন নাকি সিলেট ফিরে যাবেন।

মাদারিপুর থেকে আসা ১৫ বছর বয়সী রাফিয়া তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে দুবাই থেকে আসা বাবা জালাল হাওলাদারকে নিতে অপেক্ষায় ছিলেন। বাবার ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে অবতরণের কথা ছিল। দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরা প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তারা অপেক্ষায় বিরক্ত ও হতাশ হয়ে পড়েন।

দীর্ঘ ভোগান্তির পর, রাত ৯টা ৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়। ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট নিরাপদে অবতরণের মাধ্যমে বিমানবন্দরটি আবার সচল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শুধু কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতিই করেনি, বরং বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বারের কার্যক্রমকে কয়েক ঘণ্টার জন্য অচল করে দিয়েছিল। এর ফলে অসংখ্য বিদেশগামী যাত্রী অনিশ্চয়তা ও চাকরি হারানোর আশঙ্কায় পড়েন এবং বিদেশ ফেরত যাত্রীদের স্বজনরা পড়েন উৎকণ্ঠায়। দ্রুত অগ্নি নির্বাপণ এবং ফ্লাইট কার্যক্রম আংশিকভাবে শুরু করা গেলেও, এই ঘটনা বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনার জরুরি নিরাপত্তা প্রটোকল এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।