পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে বা তাকে গোপনে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে সম্প্রতি যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে আদিয়ালা কারা কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাওয়ালপিন্ডি কারা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ছড়িয়ে পড়া এই গুঞ্জন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আদিয়ালা জেল প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে, ইমরান খানকে জেল থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হয়নি। তিনি জেলের ভেতরেই আছেন এবং সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, তার স্বাস্থ্য নিয়ে যে নানা জল্পনা চলছে তা ‘নির্বিচার ও ভিত্তিহীন’। জেল কর্তৃপক্ষ তার সুস্থতা নিশ্চিত করছে এবং তিনি প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন।

🗣️ প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা আসিফের মন্তব্য

কারা কর্তৃপক্ষের বিবৃতির পাশাপাশি, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ দাবি করেছেন যে, ইমরান খান জেলে ‘যথেষ্ট আরাম-আয়েশ’ পাচ্ছেন এবং তার প্রতি বিশেষ সুবিধা দেখানো হচ্ছে।তিনি বলেন, “উনার জন্য যে খাবারের মেনু আসে, সেটা পাঁচতারকা হোটেলেও পাওয়া যায় না।”আসিফ জানান, ইমরান খানের সেলে টেলিভিশন আছে, যেখানে তিনি যে কোনো চ্যানেল দেখতে পারেন। এছাড়া ব্যায়ামের জন্য আলাদা মেশিনও রাখা হয়েছে। তিনি নিজের কারাবাসের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, তারা সাধারণ খাবার খেতেন, ঠান্ডা মেঝেতে ঘুমাতেন, এবং জানুয়ারিতে মাত্র দুটি কম্বল ও গরম পানিও পেতেন না। তিনি ব্যঙ্গ করে দাবি করেন, ইমরান খানকে একটি ডাবল বেড ও ‘ভেলভেট ম্যাট্রেস’ দেওয়া হয়েছে।

😠 পিটিআই ও পরিবারের অভিযোগ

অন্যদিকে, পিটিআই এবং ইমরান খানের পরিবার অভিযোগ করেছে যে, তাকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছে। তার বোনদের অভিযোগ, গত তিন সপ্তাহেও তারা ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পাননি। এজন্য তারা কারাগারে সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের ওপর আকস্মিকভাবে লাঠিপেটা শুরু করে। পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইমরান খানকে অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি বই, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং আইনজীবীদের সঙ্গেও দেখা করার অনুমতি সীমিত করা হয়েছে। আইনজীবী খালিদ ইউসুফ চৌধুরী অভিযোগ করেন, “এখানে আইনের কোনো নিয়ম নেই। জঙ্গলের আইন চলছে, যেখানে শুধু শাসকেরই অধিকার থাকে।” খাইবার-পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোয়েল আফ্রিদিকেও সাতবার চেষ্টা করেও ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পিটিআই অভিযোগ করেছে, জেল কর্তৃপক্ষকে একজন সেনা কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

ইমরান খান ২০২৩ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি। তার সুস্থতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে পরস্পরবিরোধী দাবি অব্যাহত রয়েছে।