বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এই সভায় তিনি আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেবল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে না দেখে, এটিকে জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করে এই কর্তব্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য পুলিশ সুপারদের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানান। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুন্দর, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে জেলা পুলিশ বাহিনী যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে এই নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে, এবারের নির্বাচন কোনো সাধারণ নির্বাচন নয়। এটি হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া একটি সুযোগ। তিনি গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতি যে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল, আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমেই সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন: আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা এই গণভোটকে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর মতে, এই গণভোটের মাধ্যমে যে নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, তা পরবর্তী শতবর্ষ ধরে এই জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার গুরুত্ব দিয়ে প্রফেসর ইউনূস পুলিশ সুপারদের প্রতি নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন যে, সামনের নির্বাচনে বিদেশ থেকে বহু প্রতিনিধিদল এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসবেন। পুলিশ সুপারদের এমনভাবে কাজ করে যেতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে সারা বিশ্বের কাছে একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে পারেন।
অতীতের নির্বাচনগুলোর সমালোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অতীতের নির্বাচনগুলো আমরা সবাই দেখেছি। কেউ প্রহসনের নির্বাচন বলে, কেউ বলে প্রতারণা আর তামাশার নির্বাচন।’ তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন যে, সেই নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের অনেক উপরে উঠতে হবে এবং একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করতে হবে। এই ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসাই আজকের পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে তিনি তাদের উদ্যোগী এবং সৃজনশীল হওয়ার গুরুত্ব দেন। তিনি স্বীকার করেন যে, ‘সব কথা তো কাগজে লিখে দেওয়া যায় না,’ তাই তিনি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের সময় সবসময়েই চিন্তা করার পরামর্শ দেন যে কীভাবে কাজটি আরও সুন্দর ও কার্যকরভাবে করা যায়।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সদস্যদের কাজের মানোন্নয়ন এবং কাজে উদ্দীপনা বাড়ানোর জন্য একটি সৃজনশীল পরামর্শ দেন। তিনি বলেন যে, জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে তিনি পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করার পরামর্শও দেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বকস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম।
নিজস্ব প্রতিবেদক 
























