বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসি ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ সামনে রেখে নিজেকে আর্জেন্টিনার অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রস্তুত করছেন। মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বৈশ্বিক মহাযজ্ঞ নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের এই অধিনায়ক দারুণ রোমাঞ্চিত। আগামী শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিশ্বকাপের গ্রুপ ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার ঠিক প্রাক্কালে ইএসপিএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি নিজেদের প্রস্তুতি, লক্ষ্য এবং বিশ্বকাপ জয়ের কঠিন বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছেন।
শিরোপা ধরে রাখার মিশনে আর্জেন্টিনা যে এবারও তাদের সর্বস্ব দিয়ে লড়বে, সে বিষয়টি মেসি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেও একই সঙ্গে তিনি কঠিন সতর্কবার্তা দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফুটবলের এই সর্বোচ্চ মঞ্চে ছোটখাটো ভুল বা ভাগ্যের সামান্য হেরফেরেই একটি দলের বিদায়ঘণ্টা বেজে যেতে পারে।
কাতার বিশ্বকাপের সাফল্যের পুনরাবৃত্তির আশাবাদ ব্যক্ত করে মেসি লক্ষ্যের পথে ভাগ্যের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় দল এমন একটি গ্রুপ যারা আবারও চেষ্টা করবে এবং নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে লড়াই করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ছোটখাটো ডিটেইলস বা ভুলের কারণেই আপনি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে পারেন। তিনি বিশ্বকাপকে ‘খুব কঠিন জায়গা’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে যেকোনো দলই পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ‘বল পোস্টে লেগে ভেতরে ঢুকবে নাকি বাইরে যাবে—এমন সামান্য ব্যবধানেই ভাগ্য নির্ধারিত হয়। আবার পেনাল্টিতেও হেরে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।’
নিজের কথার স্বপক্ষে রোজারিও থেকে উঠে আসা এই মহাতারকা কাতার বিশ্বকাপের উদাহরণ টানেন। তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্স—উভয় দলের বিপক্ষেই আর্জেন্টিনা অনেক ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পেনাল্টি শ্যুটআউটে যেতে হয়েছিল। তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে বলেন, সেই মুহূর্তে তাদের পাশে ছিলেন গোলরক্ষক ‘দিবু’ (এমিলিয়ানো মার্তিনেস), ‘যে অতিমানবের মতো আমাদের জিতিয়েছিল।’ তবে মেসি বাস্তববাদী ছিলেন, তাই তিনি যোগ করেন যে, পেনাল্টিতে গিয়ে সবসময় জেতা সম্ভব নাও হতে পারে। তিনি স্বীকার করেন, ‘সত্যি বলতে, বিশ্বকাপ জেতা খুবই কঠিন কাজ।’
সাক্ষাৎকারের শেষের দিকে মেসি তার ক্যারিয়ারের সেরা কোচ হিসেবে পেপ গার্দিওলার নাম উল্লেখ করেন। শনিবার ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসের বিপক্ষে এমএলএস কাপের ফাইনালে ইন্টার মিয়ামিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ঠিক আগে পুরোনো গুরুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন তিনি। মেসি গার্দিওলাকে ‘অনন্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘অনেক অসাধারণ কোচ আছেন, কিন্তু তার মধ্যে ভিন্ন কিছু আছে। আমার মতে তিনিই সেরা।’ তিনি গার্দিওলার ভিশন, গেম প্রিপারেশন এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতাসহ সবকিছু মিলিয়ে তাকে ‘পরিপূর্ণ’ বলে মনে করেন। তার মতে, গার্দিওলা যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই জিতেছেন—তবে শুধু জেতার জন্য নয়, তার দল যেভাবে খেলে, সেটাই তাকে আলাদা করে।
আগামী ২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মাঠে নামলেও লিওনেল মেসির বক্তব্যে স্পষ্ট যে, আলবিসেলেস্তেরা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে রাজি নয়। বরং সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং নিজেদের সর্বস্ব উজার করে দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই তারা শিরোপা ধরে রাখার কঠিন মিশনে নামতে চায়।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















