ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ‘নেসেট’ অধিকৃত পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার একটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। এই বিলটি পূর্ণাঙ্গভাবে পাস হলে ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব কার্যকর হবে, যা আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হচ্ছে।
বিল পাসের বিবরণ
- ভোটের ফলাফল: মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) নেসেটের ১২০ জন সদস্যের মধ্যে ২৫-২৪ ভোটে বিলটি প্রাথমিকভাবে পাস হয়।
- পরবর্তী ধাপ: বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হতে আরও তিন ধাপের ভোটে অনুমোদন লাগবে।
- আলোচনার জন্য প্রেরণ: বিলটি এখন সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে পাঠানো হবে।
- উদ্দেশ্য: নেসেটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিলটির উদ্দেশ্য হলো ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব জুদিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে (পশ্চিম তীর) প্রয়োগ’ করা।
নেতানিয়াহুর অবস্থান ও জোটের প্রতিক্রিয়া
বিলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার দল লিকুদ পার্টির পক্ষ থেকে বিরোধিতা এলেও জোটের কয়েকজন সদস্য এবং বিরোধী এমপি এতে সমর্থন দেন।
- প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরোধিতা: প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ব্যক্তিগতভাবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।
- লিকুদ পার্টির বিবৃতি: নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি এই ভোটকে ‘বিরোধীদলের উসকানি’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, এই বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। তারা আরও বলেছে, “আসল সার্বভৌমত্ব আইন দেখানোর ভান করে নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই বিল পাসের ঘটনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে:
- ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: তারা নেসেটের এই প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে যে, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা একটি একক ভৌগোলিক ইউনিট এবং এর ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌম অধিকার নেই।
- হামাস: সংগঠনটি বলেছে, এই বিলগুলো দখলদার ইসরায়েলের ঔপনিবেশবাদী চেহারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। তারা এই পদক্ষেপকে অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য, আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে।
- অন্যান্য দেশ: কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডানও এই ভোটে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
- যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান: বিলটি পাস হওয়ার এক মাস আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্তির অনুমতি দেওয়া হবে না।
এই বিল কার্যকর হলে তা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথকে আরও জটিল করে তুলবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















