০১:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

আসনের ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত হতে চায় বিএনপির মিত্ররা

বিএনপির নেতৃত্বাধীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজ নিজ আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা চান। এর কারণ হলো, নিশ্চিত প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করতে পারবেন এবং বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।হাতেগোনা কয়েকজন বাদে জোট শরিকের অধিকাংশকেই এখন পর্যন্ত মনোনয়নের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী অধিকাংশ মিত্র এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। এই তালিকা বর্তমানে যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা চলছে। যুগপৎ শরিকরা এ পর্যন্ত ১০৩ জন প্রার্থীর তালিকা বিএনপির কাছে জমা দিয়েছে। ১২ দলীয় জোট ২১ জন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯ জন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯ জন, এলডিপি,১৩ জন, গণফোরাম ১৬ জন, এনডিএম ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫ জন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬ জন, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) ৪ জন।

এখনো প্রার্থী তালিকা জমা না দিলেও গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণঅধিকার পরিষদ-এর সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। শীঘ্রই গণতন্ত্র মঞ্চ অর্ধশতাধিক এবং গণঅধিকার পরিষদ ৩০ জনের তালিকা দিতে পারে। মিত্রদের ১০৩ জনের প্রার্থী তালিকা বর্তমানে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে রয়েছে। তিনি এই তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। যাচাইয়ের মূল মাপকাঠিগুলো হলো: সংশ্লিষ্ট এলাকায় মিত্র দলের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দলের প্রার্থী কারা। কেমন ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়াও বিবেচনায় নিচ্ছে। আরপিও-এর খসড়ার নতুন বিধান অনুযায়ী, ‘নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, সংশোধিত আরপিওর খসড়ার কারণে বিএনপিকে আরও পর্যালোচনা ও চিন্তাভাবনা করে আসন বণ্টনের কাজ করতে হবে। তবে, সুষ্ঠু রাজনীতি ও নির্বাচনের স্বার্থে এই বিধানটি পুনর্বিবেচনা করতে বিএনপি শিগগির নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবে।

বিএনপি নির্বাচন সামনে রেখে একটি বড় জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। জামায়াতের বাইরে থাকা অন্য ইসলামী দল ও আলেমদের পাশাপাশি বামপন্থি কিছু দল এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কেও পাশে চায় বিএনপি। দলীয় সূত্রমতে, বিএনপি এবার জোট শরিকদের জন্য পঞ্চাশের আশপাশে আসন ছাড়তে পারে। তবে জোটের পরিধি বড় হলে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। জোটের যেসব প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট এলাকায় শক্ত অবস্থান আছে এবং বিজয়ী হয়ে আসার মতো সক্ষমতা রয়েছে, ঢাকাসহ দেশের এমন বিভিন্ন জায়গায় আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দেবে বিএনপি।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদের ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে তৎকালীন ২০ দলীয় জোটকে ৪০টি (নিবন্ধন না থাকায় জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করে) এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দুটি দলই এবার তাদের নেতৃত্বে পৃথক নির্বাচনী জোট গঠনে তৎপরতা চালাচ্ছে।

১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার-এর মতো জোট নেতারা দ্রুত জোটের প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার জন্য বিএনপিকে তাগিদ দিয়েছেন, যেন প্রার্থীরা পূর্ণ উদ্যমে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেন। মিত্রদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বা দায়িত্বশীল নেতাদের জানিয়ে না দেওয়ায় জোট নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল ঘোষিত হবে। বিএনপি এই তপশিলের আগেই মিত্রদের আসন বণ্টনের বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে চায়।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

স্বাধীনতার সুফল আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি : মামুনুল হক

আসনের ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত হতে চায় বিএনপির মিত্ররা

প্রকাশিত : ০২:০৮:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপির নেতৃত্বাধীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজ নিজ আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা চান। এর কারণ হলো, নিশ্চিত প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করতে পারবেন এবং বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।হাতেগোনা কয়েকজন বাদে জোট শরিকের অধিকাংশকেই এখন পর্যন্ত মনোনয়নের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী অধিকাংশ মিত্র এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। এই তালিকা বর্তমানে যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা চলছে। যুগপৎ শরিকরা এ পর্যন্ত ১০৩ জন প্রার্থীর তালিকা বিএনপির কাছে জমা দিয়েছে। ১২ দলীয় জোট ২১ জন, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯ জন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ১৯ জন, এলডিপি,১৩ জন, গণফোরাম ১৬ জন, এনডিএম ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫ জন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬ জন, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) ৪ জন।

এখনো প্রার্থী তালিকা জমা না দিলেও গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণঅধিকার পরিষদ-এর সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। শীঘ্রই গণতন্ত্র মঞ্চ অর্ধশতাধিক এবং গণঅধিকার পরিষদ ৩০ জনের তালিকা দিতে পারে। মিত্রদের ১০৩ জনের প্রার্থী তালিকা বর্তমানে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে রয়েছে। তিনি এই তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। যাচাইয়ের মূল মাপকাঠিগুলো হলো: সংশ্লিষ্ট এলাকায় মিত্র দলের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দলের প্রার্থী কারা। কেমন ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়াও বিবেচনায় নিচ্ছে। আরপিও-এর খসড়ার নতুন বিধান অনুযায়ী, ‘নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, সংশোধিত আরপিওর খসড়ার কারণে বিএনপিকে আরও পর্যালোচনা ও চিন্তাভাবনা করে আসন বণ্টনের কাজ করতে হবে। তবে, সুষ্ঠু রাজনীতি ও নির্বাচনের স্বার্থে এই বিধানটি পুনর্বিবেচনা করতে বিএনপি শিগগির নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবে।

বিএনপি নির্বাচন সামনে রেখে একটি বড় জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। জামায়াতের বাইরে থাকা অন্য ইসলামী দল ও আলেমদের পাশাপাশি বামপন্থি কিছু দল এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কেও পাশে চায় বিএনপি। দলীয় সূত্রমতে, বিএনপি এবার জোট শরিকদের জন্য পঞ্চাশের আশপাশে আসন ছাড়তে পারে। তবে জোটের পরিধি বড় হলে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। জোটের যেসব প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট এলাকায় শক্ত অবস্থান আছে এবং বিজয়ী হয়ে আসার মতো সক্ষমতা রয়েছে, ঢাকাসহ দেশের এমন বিভিন্ন জায়গায় আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দেবে বিএনপি।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদের ৫৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে তৎকালীন ২০ দলীয় জোটকে ৪০টি (নিবন্ধন না থাকায় জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট করে) এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দুটি দলই এবার তাদের নেতৃত্বে পৃথক নির্বাচনী জোট গঠনে তৎপরতা চালাচ্ছে।

১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার-এর মতো জোট নেতারা দ্রুত জোটের প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার জন্য বিএনপিকে তাগিদ দিয়েছেন, যেন প্রার্থীরা পূর্ণ উদ্যমে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেন। মিত্রদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বা দায়িত্বশীল নেতাদের জানিয়ে না দেওয়ায় জোট নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল ঘোষিত হবে। বিএনপি এই তপশিলের আগেই মিত্রদের আসন বণ্টনের বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে চায়।