০১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
খুলনা বিএনপির রাজনীতি

নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রত্যাবর্তনের আভাস: পদ-পদবিহীন নেতার নীরব সাফল্য

খুলনায় বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রায় চার বছর ধরে পদ-পদবিহীন থাকার পর অবশেষে আবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে এসেছেন। ৪৬ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ৩০ বছর নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতাকে কেন্দ্র থেকে সকল পদ থেকে বাদ দেওয়া হলেও, তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আজ গুলশানে তারেক রহমানের সাথে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বৈঠকে ডাক পাওয়ার ঘটনা খুলনা বিএনপিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতন

মঞ্জু ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে খুলনার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৯২ থেকে ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নিজের লোকদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল। এর ফলস্বরূপ, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে তাকে এবং তার অনুসারীদের বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পদ-পদবি হারানোর পর মঞ্জুর রাজনীতি

দলীয় কাঠামো থেকে বাদ পড়লেও নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং তার অনুসারীরা রাজনীতি থেকে সরে যাননি। কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে শোকজ করা হয় এবং পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মঞ্জুর অনুসারীরা দলের এই পরিণতি মানতে না পেরে গণপদত্যাগ করেন এবং কিছুদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ছয় মাস নিষ্ক্রিয় থাকার পরই মঞ্জু আবার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরব হন। তিনি কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি বড় কর্মসূচি তার অনুসারীদের নিয়ে আলাদা ব্যানার ও মিছিল সহকারে পালন করেছেন। জাতীয় দিবসগুলোও বড় পরিসরে পালন করেন।মঞ্জু জানান, তার অনুসারী নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের পদ-পদবি বা চাওয়া-পাওয়া ছাড়াই পকেটের টাকা খরচ করে তার সঙ্গে থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন এবং মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে কাজ করেছেন।

প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত এবং নতুন আলোচনা

প্রায় চার বছর পর দলের কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও নজরুল ইসলাম মঞ্জু কেন্দ্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি পেয়েছেন। আজ (সোমবার) গুলশানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বৈঠকে ডাক পেয়েছেন তিনি।এই ডাকেই মঞ্জুর অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠেছেন, যা তাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে।মঞ্জু বলেন, তাকে এই বৈঠকে ডাকার কারণে খুলনা বিএনপিতে ‘অন্যরকম আলোচনা’ হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে দলে প্রাণ ফিরে এসেছে।খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ চায় মঞ্জুর মতো যোগ্য ও দক্ষ সংগঠক দলকে নেতৃত্ব দিক এবং জনগণের কাছে বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে তিনি সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করুক। মঞ্জু পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কখনোই দলের বাইরে যাননি বা বিশ্বাস ঘাতকতা করেননি এবং তিনি আগের মতো দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছেন।

সবমিলিয়ে, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দীর্ঘদিনের নীরব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন এবং বিপুলসংখ্যক অনুসারী ধরে রাখার কৌশলের ফলে তিনি আবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিবেচনায় স্থান পেয়েছেন। এটি খুলনা বিএনপিতে তার প্রভাব ও গুরুত্ব পুনরুদ্ধারের একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত বহন করছে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

স্বাধীনতার সুফল আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি : মামুনুল হক

খুলনা বিএনপির রাজনীতি

নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রত্যাবর্তনের আভাস: পদ-পদবিহীন নেতার নীরব সাফল্য

প্রকাশিত : ০১:৪৩:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

খুলনায় বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রায় চার বছর ধরে পদ-পদবিহীন থাকার পর অবশেষে আবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে এসেছেন। ৪৬ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ৩০ বছর নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতাকে কেন্দ্র থেকে সকল পদ থেকে বাদ দেওয়া হলেও, তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আজ গুলশানে তারেক রহমানের সাথে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বৈঠকে ডাক পাওয়ার ঘটনা খুলনা বিএনপিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতন

মঞ্জু ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে খুলনার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৯২ থেকে ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নিজের লোকদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল। এর ফলস্বরূপ, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে তাকে এবং তার অনুসারীদের বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পদ-পদবি হারানোর পর মঞ্জুর রাজনীতি

দলীয় কাঠামো থেকে বাদ পড়লেও নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং তার অনুসারীরা রাজনীতি থেকে সরে যাননি। কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে শোকজ করা হয় এবং পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মঞ্জুর অনুসারীরা দলের এই পরিণতি মানতে না পেরে গণপদত্যাগ করেন এবং কিছুদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ছয় মাস নিষ্ক্রিয় থাকার পরই মঞ্জু আবার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরব হন। তিনি কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি বড় কর্মসূচি তার অনুসারীদের নিয়ে আলাদা ব্যানার ও মিছিল সহকারে পালন করেছেন। জাতীয় দিবসগুলোও বড় পরিসরে পালন করেন।মঞ্জু জানান, তার অনুসারী নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের পদ-পদবি বা চাওয়া-পাওয়া ছাড়াই পকেটের টাকা খরচ করে তার সঙ্গে থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন এবং মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে কাজ করেছেন।

প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত এবং নতুন আলোচনা

প্রায় চার বছর পর দলের কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও নজরুল ইসলাম মঞ্জু কেন্দ্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি পেয়েছেন। আজ (সোমবার) গুলশানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বৈঠকে ডাক পেয়েছেন তিনি।এই ডাকেই মঞ্জুর অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠেছেন, যা তাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে।মঞ্জু বলেন, তাকে এই বৈঠকে ডাকার কারণে খুলনা বিএনপিতে ‘অন্যরকম আলোচনা’ হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে দলে প্রাণ ফিরে এসেছে।খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ চায় মঞ্জুর মতো যোগ্য ও দক্ষ সংগঠক দলকে নেতৃত্ব দিক এবং জনগণের কাছে বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে তিনি সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করুক। মঞ্জু পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কখনোই দলের বাইরে যাননি বা বিশ্বাস ঘাতকতা করেননি এবং তিনি আগের মতো দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছেন।

সবমিলিয়ে, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দীর্ঘদিনের নীরব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন এবং বিপুলসংখ্যক অনুসারী ধরে রাখার কৌশলের ফলে তিনি আবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিবেচনায় স্থান পেয়েছেন। এটি খুলনা বিএনপিতে তার প্রভাব ও গুরুত্ব পুনরুদ্ধারের একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত বহন করছে।