০১:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দেশের 'সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ

১৪ বছরের প্রতীক্ষা শেষে খুলনায় চালু হচ্ছে আধুনিক জেলা কারাগার

১৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলনার নবনির্মিত জেলা কারাগার আগামী ১ নভেম্বর চালু হতে যাচ্ছে। শতবর্ষী পুরোনো ও জনাকীর্ণ কারাগার থেকে প্রথম সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে স্থানান্তরের মাধ্যমে নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হবে। কারাগারটিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্মাণ করা হয়েছে।

নতুন কারাগারের বৈশিষ্ট্য

খুলনা সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কে প্রায় ৩০ একর জায়গাজুড়ে কারাগারটি নির্মিত হয়েছে। ভেতরে পাকা পথ, রঙিন ভবন, পার্কিং টাইলসের ফুটপাত, মসজিদ এবং হাসপাতাল রয়েছে। মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে বন্দিদের থাকার ভবন ১১টি। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুরো কারাগারের ভেতরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মিত হয়েছে। এক শ্রেণির বন্দি যাতে অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি ভবনের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। নবনির্মিত কারাগারের অন্যতম আকর্ষণ হলো দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মিত ফাঁসির মঞ্চ। কারা কর্তৃপক্ষ এটিকে দেশের ‘সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ’ বলে দাবি করছে।

ফাঁসির মঞ্চের বিবরণ

কারাগারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের শেষ প্রান্তের সীমানা প্রাচীরের পাশেই ছাই রংয়ের টিনের শেড ও চালে ঢেউ টিনে নির্মিত এই ফাঁসির মঞ্চের ঘরটি। এটি নির্জন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চবেষ্টিত ঘরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়ই ৩৪ ফুট। মঞ্চের উচ্চতা সামনে ২০ ফুট এবং পেছনে ১৭ ফুট। মঞ্চটিতে ওঠার জন্য দু’দিক থেকেই পাকা সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে মেঝেতে লোহার দুটি পাত ও একটি লিভার দেখা যায়। লিভার টান দিলেই আসামির পায়ের নিচ থেকে পাত সরে যাবে। মঞ্চের নিচে প্রায় ১০ ফুটের মতো গভীরতা রাখা হয়েছে।জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান জানিয়েছেন, অন্যান্য জায়গায় ফাঁসি কার্যকরের সময় অস্থায়ীভাবে পর্দা ব্যবহার করে ঘিরে দেওয়া হলেও, এখানে আধুনিক ডিজাইনে স্থায়ীভাবে টিন দিয়ে মঞ্চটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, যা আসামিদের ভয় কমাতে সহায়ক হবে।খুলনা পুরাতন কারাগারে বর্তমানে ৩৩ জন ফাঁসির আসামি রয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের প্রক্রিয়া ও আইন

খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, যৌতুকের জন্য হত্যা, ডাকাতিকালে হত্যা, অ্যাসিড নিক্ষেপ, মাদক বহন, মানব পাচার, রাষ্ট্রদ্রোহ এবং অপহরণকালে কারও মৃত্যু ঘটানোর মতো গুরুতর অপরাধে প্রাণদণ্ডের বিধান রয়েছে। অধস্তন আদালতে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে কারাবিধির ৯৮০ ধারা অনুযায়ী আসামিকে অন্যান্য বন্দি থেকে পৃথক সেলে রাখা হয়, যা ‘কনডেম সেল’ নামে পরিচিত। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী, অধস্তন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় হাইকোর্টে ‘ডেথ রেফারেন্স’ হিসেবে নথিভুক্ত হয়। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে সাজা বহাল থাকলে এবং আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও নামঞ্জুর হলে, আসামি শেষ সুযোগ হিসেবে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন। প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলেই কারাবিধি অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

স্বাধীনতার সুফল আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি : মামুনুল হক

দেশের 'সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ

১৪ বছরের প্রতীক্ষা শেষে খুলনায় চালু হচ্ছে আধুনিক জেলা কারাগার

প্রকাশিত : ০৪:১৯:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

১৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলনার নবনির্মিত জেলা কারাগার আগামী ১ নভেম্বর চালু হতে যাচ্ছে। শতবর্ষী পুরোনো ও জনাকীর্ণ কারাগার থেকে প্রথম সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে স্থানান্তরের মাধ্যমে নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হবে। কারাগারটিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্মাণ করা হয়েছে।

নতুন কারাগারের বৈশিষ্ট্য

খুলনা সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কে প্রায় ৩০ একর জায়গাজুড়ে কারাগারটি নির্মিত হয়েছে। ভেতরে পাকা পথ, রঙিন ভবন, পার্কিং টাইলসের ফুটপাত, মসজিদ এবং হাসপাতাল রয়েছে। মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে বন্দিদের থাকার ভবন ১১টি। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুরো কারাগারের ভেতরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মিত হয়েছে। এক শ্রেণির বন্দি যাতে অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি ভবনের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। নবনির্মিত কারাগারের অন্যতম আকর্ষণ হলো দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মিত ফাঁসির মঞ্চ। কারা কর্তৃপক্ষ এটিকে দেশের ‘সবচেয়ে আধুনিক ফাঁসির মঞ্চ’ বলে দাবি করছে।

ফাঁসির মঞ্চের বিবরণ

কারাগারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের শেষ প্রান্তের সীমানা প্রাচীরের পাশেই ছাই রংয়ের টিনের শেড ও চালে ঢেউ টিনে নির্মিত এই ফাঁসির মঞ্চের ঘরটি। এটি নির্জন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চবেষ্টিত ঘরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়ই ৩৪ ফুট। মঞ্চের উচ্চতা সামনে ২০ ফুট এবং পেছনে ১৭ ফুট। মঞ্চটিতে ওঠার জন্য দু’দিক থেকেই পাকা সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে মেঝেতে লোহার দুটি পাত ও একটি লিভার দেখা যায়। লিভার টান দিলেই আসামির পায়ের নিচ থেকে পাত সরে যাবে। মঞ্চের নিচে প্রায় ১০ ফুটের মতো গভীরতা রাখা হয়েছে।জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান জানিয়েছেন, অন্যান্য জায়গায় ফাঁসি কার্যকরের সময় অস্থায়ীভাবে পর্দা ব্যবহার করে ঘিরে দেওয়া হলেও, এখানে আধুনিক ডিজাইনে স্থায়ীভাবে টিন দিয়ে মঞ্চটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, যা আসামিদের ভয় কমাতে সহায়ক হবে।খুলনা পুরাতন কারাগারে বর্তমানে ৩৩ জন ফাঁসির আসামি রয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের প্রক্রিয়া ও আইন

খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, যৌতুকের জন্য হত্যা, ডাকাতিকালে হত্যা, অ্যাসিড নিক্ষেপ, মাদক বহন, মানব পাচার, রাষ্ট্রদ্রোহ এবং অপহরণকালে কারও মৃত্যু ঘটানোর মতো গুরুতর অপরাধে প্রাণদণ্ডের বিধান রয়েছে। অধস্তন আদালতে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে কারাবিধির ৯৮০ ধারা অনুযায়ী আসামিকে অন্যান্য বন্দি থেকে পৃথক সেলে রাখা হয়, যা ‘কনডেম সেল’ নামে পরিচিত। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী, অধস্তন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় হাইকোর্টে ‘ডেথ রেফারেন্স’ হিসেবে নথিভুক্ত হয়। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে সাজা বহাল থাকলে এবং আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও নামঞ্জুর হলে, আসামি শেষ সুযোগ হিসেবে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন। প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলেই কারাবিধি অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।