০৯:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

জাহানারা আলমের ১৩ পৃষ্ঠার চিঠি: দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে তোলপাড়

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের পেসার জাহানারা আলমের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে যাওয়া বঞ্চনা ও নানা ঘটনা নিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪ বছর আগে নিজের ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়গুলো তুলে ধরে ১৩ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ চিঠি তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীকে দিয়েছিলেন। কালবেলার হাতে আসা সেই চিঠিতে ম্যানেজার ও নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, নারী বিভাগের প্রয়াত ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদ থেকে শুরু করে কয়েকজন কোচের বিরুদ্ধে তাকে বঞ্চনা করার বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

চিঠির শুরুতেই জাহানারা তৎকালীন কো-অর্ডিনেটর সরফরাজ বাবুর সঙ্গে তার কথোপকথন তুলে ধরেন, যা থেকে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জাহানারা লিখেছেন, বাবু ভাই তাকে বলেন, “দেখেন আপা সামনে অনেক বড় টুর্নামেন্ট আমাদের, এক হয়ে খেলতে হবে। টিমে কোনো ঝামেলা থাকলে নিজেরা ঠিক করে ফেলেন। তৌহিদ ভাই অনেক চেষ্টা করেছেন। তৌহিদ ভাই নিজেও খুব চাপে আছে। হয়তো উনি চাকরিও ছেড়ে দিতে পারেন। দলে যদি কোনো ফাটল থাকে তো সিমেন্ট লাগানোর দায়িত্ব আপনাদের সিনিয়রদের।” জবাবে জাহানারা তখন বলেছিলেন যে, দলের সব সমস্যা সম্পর্কে তৌহিদ ভাই অবগত, সুতরাং উনি চাইলেই নিজেই সব ঠিক করতে পারতেন।

সেই ঘটনার পরপরই টিম ম্যানেজার ও নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু জাহানারার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয়। চিঠির দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেন, “মঞ্জু ভাই মাঠে আমার সঙ্গে অকারণে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। খুব চিৎকার এং রূঢ়ভাবে কথা বলেন। আমি হতচকিত, বুঝলাম না আমার দোষটা কোথায়!” এরপর তিনি প্রয়াত ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদকে ফোন করলেও অনুমতি না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন।

চিঠির তৃতীয় পৃষ্ঠায় বাংলাদেশ গেমসের দল গঠন নিয়ে দলের মধ্যেকার গ্রুপিং ও সিনিয়রদের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। জাহানারা লেখেন, রুমানা যখন ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়ক, তখন বাংলাদেশ গেমসের তিন দলের একটিতে সালমা আপু, একটিতে জ্যোতি ও অন্যটিতে শারমিনকে অধিনায়ক করা হয়, যিনি কোনো ঘরোয়া লিগেও আগে নেতৃত্ব দেননি। জাহানারা অভিযোগ করেন, “রুমানা এত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে যে ওই টুর্নামেন্টে সে পারফরম্যান্স করতে পারেনি। ওই টুর্নামেন্ট থেকে আমার, সালমা আপুর ও রুমানার সঙ্গে টেকনিক্যালি খারাপ ব্যবহার শুরু হয় এবং সব জায়গায় জ্যোতির প্রাধান্য বাড়তে থাকে।”

একটি অনুশীলন ম্যাচে নির্বাচক মঞ্জুর নির্দেশনা অমান্য করায় তাকে বোলিং করতে না দেওয়ার কঠোর ঘটনাও তিনি চিঠিতে তুলে ধরেন। তিনি লিখেন, অনুশীলন ম্যাচে মঞ্জু ভাই ওয়াকিটকিতে তাকে ইয়র্কার বল করতে বলেন। জাহানারা ইয়র্কার চেষ্টা করলে বলটি লেগ মিডলে পড়ে। কিন্তু পরের বলটি গুড লেন্সে হওয়ায় মঞ্জু ওয়াকিটকিতে অসম্ভব জোরে চিৎকার করে বলেন, “খবরদার জাহানারাকে আর যেন বল না দেওয়া হয়। অন্য যে কেউ করবে জাহানারা নয়! সালমা দেখ ব্যাপারটা।” এই ঘটনায় মাঠে উপস্থিত আম্পায়ারসহ সবাই হতবাক হয়ে যান বলে তিনি জানান।

এভাবে ১৩ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ চিঠিতে জাহানারা আলম দলের অভ্যন্তরে সিনিয়রদের প্রতি বৈষম্য, গ্রুপিং, এবং নিজের সঙ্গে ঘটা একের পর এক বঞ্চনার ঘটনাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এই চিঠি দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বড় ধরনের তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

জনপ্রিয়

স্বাধীনতার সুফল আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি : মামুনুল হক

জাহানারা আলমের ১৩ পৃষ্ঠার চিঠি: দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে তোলপাড়

প্রকাশিত : ০৮:৩২:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের পেসার জাহানারা আলমের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে যাওয়া বঞ্চনা ও নানা ঘটনা নিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪ বছর আগে নিজের ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়গুলো তুলে ধরে ১৩ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ চিঠি তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীকে দিয়েছিলেন। কালবেলার হাতে আসা সেই চিঠিতে ম্যানেজার ও নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, নারী বিভাগের প্রয়াত ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদ থেকে শুরু করে কয়েকজন কোচের বিরুদ্ধে তাকে বঞ্চনা করার বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

চিঠির শুরুতেই জাহানারা তৎকালীন কো-অর্ডিনেটর সরফরাজ বাবুর সঙ্গে তার কথোপকথন তুলে ধরেন, যা থেকে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জাহানারা লিখেছেন, বাবু ভাই তাকে বলেন, “দেখেন আপা সামনে অনেক বড় টুর্নামেন্ট আমাদের, এক হয়ে খেলতে হবে। টিমে কোনো ঝামেলা থাকলে নিজেরা ঠিক করে ফেলেন। তৌহিদ ভাই অনেক চেষ্টা করেছেন। তৌহিদ ভাই নিজেও খুব চাপে আছে। হয়তো উনি চাকরিও ছেড়ে দিতে পারেন। দলে যদি কোনো ফাটল থাকে তো সিমেন্ট লাগানোর দায়িত্ব আপনাদের সিনিয়রদের।” জবাবে জাহানারা তখন বলেছিলেন যে, দলের সব সমস্যা সম্পর্কে তৌহিদ ভাই অবগত, সুতরাং উনি চাইলেই নিজেই সব ঠিক করতে পারতেন।

সেই ঘটনার পরপরই টিম ম্যানেজার ও নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু জাহানারার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয়। চিঠির দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেন, “মঞ্জু ভাই মাঠে আমার সঙ্গে অকারণে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। খুব চিৎকার এং রূঢ়ভাবে কথা বলেন। আমি হতচকিত, বুঝলাম না আমার দোষটা কোথায়!” এরপর তিনি প্রয়াত ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদকে ফোন করলেও অনুমতি না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন।

চিঠির তৃতীয় পৃষ্ঠায় বাংলাদেশ গেমসের দল গঠন নিয়ে দলের মধ্যেকার গ্রুপিং ও সিনিয়রদের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। জাহানারা লেখেন, রুমানা যখন ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়ক, তখন বাংলাদেশ গেমসের তিন দলের একটিতে সালমা আপু, একটিতে জ্যোতি ও অন্যটিতে শারমিনকে অধিনায়ক করা হয়, যিনি কোনো ঘরোয়া লিগেও আগে নেতৃত্ব দেননি। জাহানারা অভিযোগ করেন, “রুমানা এত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে যে ওই টুর্নামেন্টে সে পারফরম্যান্স করতে পারেনি। ওই টুর্নামেন্ট থেকে আমার, সালমা আপুর ও রুমানার সঙ্গে টেকনিক্যালি খারাপ ব্যবহার শুরু হয় এবং সব জায়গায় জ্যোতির প্রাধান্য বাড়তে থাকে।”

একটি অনুশীলন ম্যাচে নির্বাচক মঞ্জুর নির্দেশনা অমান্য করায় তাকে বোলিং করতে না দেওয়ার কঠোর ঘটনাও তিনি চিঠিতে তুলে ধরেন। তিনি লিখেন, অনুশীলন ম্যাচে মঞ্জু ভাই ওয়াকিটকিতে তাকে ইয়র্কার বল করতে বলেন। জাহানারা ইয়র্কার চেষ্টা করলে বলটি লেগ মিডলে পড়ে। কিন্তু পরের বলটি গুড লেন্সে হওয়ায় মঞ্জু ওয়াকিটকিতে অসম্ভব জোরে চিৎকার করে বলেন, “খবরদার জাহানারাকে আর যেন বল না দেওয়া হয়। অন্য যে কেউ করবে জাহানারা নয়! সালমা দেখ ব্যাপারটা।” এই ঘটনায় মাঠে উপস্থিত আম্পায়ারসহ সবাই হতবাক হয়ে যান বলে তিনি জানান।

এভাবে ১৩ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ চিঠিতে জাহানারা আলম দলের অভ্যন্তরে সিনিয়রদের প্রতি বৈষম্য, গ্রুপিং, এবং নিজের সঙ্গে ঘটা একের পর এক বঞ্চনার ঘটনাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এই চিঠি দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বড় ধরনের তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।