০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

বামপন্থীদের নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্ট’ গঠন: সমাজ বিপ্লব ও গণশক্তির আকাঙ্ক্ষা

জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা এবং ঐতিহাসিক বিজয়ের ফসল হাতছাড়া হওয়ার চক্র ভাঙার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্ট’ ঘোষণা করা হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদের উদ্যোগে শনিবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় কনভেনশন থেকে এই জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

এই কনভেনশনে বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল উদারনৈতিক রাজনৈতিক দলগুলোর দেড় হাজার নেতাকর্মী ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক-নারী, ডাক্তার, আইনজীবী, স্থপতি, দলিত, সুফি, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

📣 যুক্ত ফ্রন্টের মূল লক্ষ্য ও ঘোষণাপত্র

কনভেনশনের মূল সুর ছিল, বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে জনগণের ক্ষমতা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠা করা।

  • বিজয় হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা: বক্তারা দৃঢ়ভাবে বলেন যে, ৫২, ৬৯, ৭১, এবং ৯০-এর গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক বিজয় এলেও প্রতিবারই সেই বিজয় জনগণের হাতছাড়া হয়েছে। বক্তাদের মতে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাত্র ১৫ মাস পর এসে দেখা যাচ্ছে যে, এবারের বিজয়ও বহুলাংশে হাতছাড়া হতে চলেছে। এই চক্র ভাঙাই নতুন জোটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

  • ঘোষণাপত্র পাঠ: কনভেনশনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন

  • নেতৃত্ব ও পরিচালনা: প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ডা. জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য্য

🧠 বিশিষ্টজনদের সংহতি ও সমাজ পরিবর্তনের আহ্বান

জাতীয় কনভেনশনে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থী নেতারা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং এই জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সমাজ বিপ্লবের ডাক

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যুক্ত ফ্রন্ট গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই জোট গঠন আজ খুবই জরুরি। তবে এই যুক্ত ফ্রন্টকে কেবল নির্বাচনের জন্য নয়, বরং সমাজ বিপ্লবীদের যুক্ত ফ্রন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, জাতীয়তাবাদী শক্তি ৫৪ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। তাঁর মতে, বারে বারে মানুষ জীবন দেয়, নির্যাতন ভোগ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় যায় বুর্জোয়ারা; ফলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। তিনি এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং বিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ওপরও জোর দেন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বক্তা

কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন এবং সংহতি জানান:

  • শরীফ নূরুল আম্বিয়া: বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

  • মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সিপিবির সাবেক সভাপতি।

  • অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।

  • কমরেড খালেকুজ্জামান: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

  • কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন: সিপিবির সভাপতি।

  • রাজেকুজ্জামান রতন: বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক।

  • কমরেড মোশরেফা মিশু: গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়া সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, এবং বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান সহ কৃষক, শ্রমিক, নারী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

🤝 যুক্ত ফ্রন্টের অংশগ্রহণকারী প্রধান দলসমূহ

এই নতুন জোট মূলত বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও উদারনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছে:

  1. বাম গণতান্ত্রিক জোট

  2. বাংলাদেশ জাসদ

এই জোট জনগণের অজেয় গণশক্তিকে সংগঠিত করে বুর্জোয়া শক্তির কবল থেকে ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে।

জনপ্রিয়

ড. এজাজুল ইসলাম: অভিনয় ও চিকিৎসার বিরল সমন্বয়

বামপন্থীদের নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্ট’ গঠন: সমাজ বিপ্লব ও গণশক্তির আকাঙ্ক্ষা

প্রকাশিত : ০৩:২০:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা এবং ঐতিহাসিক বিজয়ের ফসল হাতছাড়া হওয়ার চক্র ভাঙার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্ট’ ঘোষণা করা হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদের উদ্যোগে শনিবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় কনভেনশন থেকে এই জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

এই কনভেনশনে বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল উদারনৈতিক রাজনৈতিক দলগুলোর দেড় হাজার নেতাকর্মী ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক-নারী, ডাক্তার, আইনজীবী, স্থপতি, দলিত, সুফি, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

📣 যুক্ত ফ্রন্টের মূল লক্ষ্য ও ঘোষণাপত্র

কনভেনশনের মূল সুর ছিল, বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে জনগণের ক্ষমতা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠা করা।

  • বিজয় হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা: বক্তারা দৃঢ়ভাবে বলেন যে, ৫২, ৬৯, ৭১, এবং ৯০-এর গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক বিজয় এলেও প্রতিবারই সেই বিজয় জনগণের হাতছাড়া হয়েছে। বক্তাদের মতে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাত্র ১৫ মাস পর এসে দেখা যাচ্ছে যে, এবারের বিজয়ও বহুলাংশে হাতছাড়া হতে চলেছে। এই চক্র ভাঙাই নতুন জোটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

  • ঘোষণাপত্র পাঠ: কনভেনশনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন

  • নেতৃত্ব ও পরিচালনা: প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ডা. জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য্য

🧠 বিশিষ্টজনদের সংহতি ও সমাজ পরিবর্তনের আহ্বান

জাতীয় কনভেনশনে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থী নেতারা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং এই জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সমাজ বিপ্লবের ডাক

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যুক্ত ফ্রন্ট গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই জোট গঠন আজ খুবই জরুরি। তবে এই যুক্ত ফ্রন্টকে কেবল নির্বাচনের জন্য নয়, বরং সমাজ বিপ্লবীদের যুক্ত ফ্রন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, জাতীয়তাবাদী শক্তি ৫৪ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। তাঁর মতে, বারে বারে মানুষ জীবন দেয়, নির্যাতন ভোগ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় যায় বুর্জোয়ারা; ফলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। তিনি এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং বিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ওপরও জোর দেন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বক্তা

কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন এবং সংহতি জানান:

  • শরীফ নূরুল আম্বিয়া: বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

  • মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম: সিপিবির সাবেক সভাপতি।

  • অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।

  • কমরেড খালেকুজ্জামান: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

  • কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন: সিপিবির সভাপতি।

  • রাজেকুজ্জামান রতন: বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক।

  • কমরেড মোশরেফা মিশু: গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়া সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, এবং বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান সহ কৃষক, শ্রমিক, নারী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

🤝 যুক্ত ফ্রন্টের অংশগ্রহণকারী প্রধান দলসমূহ

এই নতুন জোট মূলত বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও উদারনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছে:

  1. বাম গণতান্ত্রিক জোট

  2. বাংলাদেশ জাসদ

এই জোট জনগণের অজেয় গণশক্তিকে সংগঠিত করে বুর্জোয়া শক্তির কবল থেকে ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে।