জুলাই সনদের পর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য: কবে হবে গণভোট?
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর দেশের রাজনীতিতে এখন মূল আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি ঠিক কোন ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের ভিত্তি নির্ধারণের দায়িত্ব দিলেও, দলগুলোর মধ্যে গণভোটের সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য এখনও প্রকট।
জুলাই সনদ মূলত একটি রাজনৈতিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এর বাস্তবায়ন বা আইনি ভিত্তি প্রদান নিয়ে বিভিন্ন দল ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়েছে। নির্বাচনের ভিত্তি এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন:
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, সাংবিধানিক পদ্ধতিতে সরাসরি ভোটে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটের জন্য আলাদা খরচ ও সময় নষ্ট না করে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই ব্যালটে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর নির্বাচন আয়োজনে আর বাধা নেই। সংবিধানের আর্টিকেল ৬৫ অনুসারে সরাসরি ভোটেই নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে এবং নভেম্বরের মধ্যে আলাদাভাবে গণভোটের আয়োজন করে সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এরপর জাতীয় নির্বাচন। একই দিনে দুটি ভোট হলে ভোটারের অসুবিধা ও ভোট বন্ধ হলে গণভোটের ফলাফলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। পিআর (PR) পদ্ধতির দাবি তাদের দলীয়।
গণসংহতি আন্দোলন এর প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি বাধ্যবাধকতা দেওয়া হবে। একসঙ্গে ভোট হলে সবার জন্য ভালো হবে এবং মৌলিক সংস্কারের কাজ শুরু করা যাবে।
নাগরিক ঐক্য এর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন পৃথক দিনেও হতে পারে, আবার একই দিনেও হতে পারে। পৃথক দিনে হলে ২৫৬ কোটি টাকা খরচ কোনো বড় বিষয় নয়। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী সরাসরি ভোটেই জাতীয় নির্বাচন হবে। পিআর পদ্ধতি জামায়াতের দলীয় দাবি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এর মাওলানা মামুনুল হক বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া আগামী নির্বাচন নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে।এটি ‘বাঁচামরার প্রশ্ন’ এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাইপাস করা হলে তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই প্রক্রিয়া নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে।সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ঐকমত্য কমিশন এখন মূলত ক্ষমতা ভাগাভাগি বা ‘পাওয়ার স্টেক ভাগ করার’ আয়োজনে বসেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, জুলাই সনদটি মোটাদাগে ‘৯০-এর ত্রিদলীয় রূপরেখার চেয়ে শক্তিশালী কোনো সনদ হতে যাচ্ছে না। সনদ প্রণয়নে সব দল যুক্ত থাকলেও এখন বিএনপি-জামায়াত নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। তিনি জুলাই সনদ ব্যর্থ হওয়ার দায় এই দুটি দলকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন।বিএনপির নীতিনির্ধারক সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ায় ‘নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে’ এবং সাংবিধানিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। সনদের যে বিষয়গুলো পরিপত্রের মাধ্যমে সম্ভব, তা জারি হবে এবং সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা পরবর্তী নির্বাচিত পার্লামেন্টে করা হবে।
তবে অন্যান্য দলের জোর দাবি, নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। যেহেতু সনদের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই, তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং গণভোটের সময় নির্ধারণ-ই বর্তমানে নির্বাচনের ভিত্তি নির্ধারণের মূল চ্যালেঞ্জ।
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















