০৯:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে নতুন গতি

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক: পাঁচ বছরে এক লাখ দক্ষ কর্মী নেবে জাপান

বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বাধীনতার পরপরই, ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এরপর থেকে জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এবং ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন জোরদার হচ্ছে। জাপান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ এবং কৃষিপণ্য রপ্তানির একটি সম্ভাবনাময় বাজার। বিশেষত পোশাক এবং আইটি সেক্টরে জাপানে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সুযোগ রয়েছে। জাপান থেকে বাংলাদেশ উন্নত যন্ত্রপাতি, গাড়ি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও প্রযুক্তি আমদানি করে। জাপান বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা খাতে বড় অবদান রাখছে। প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষক জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পান। জাপানি ভাষা শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো এই সম্পর্ককে আরও গভীর করছে।

কর্মী নিয়োগে ঐতিহাসিক অগ্রগতি

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে জাপান সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখের বেশি দক্ষ কর্মী নেবে জাপান। জাপানের ৬৫টির বেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক ফেডারেশন, ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস (এনবিসিসি), এই কর্মী নিয়োগের সুবিধার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MOI) স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিআইটিপি) এবং স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার্সের (এসএসডব্লিউও) মতো কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন এবং কর্মসংস্থানের জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হবে। গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভসের (এনবিসিসি) ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এই অগ্রগতির বিষয়ে জানাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করে। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

 রেমিট্যান্সের গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।  প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ অর্থাৎ রেমিট্যান্স আজ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস, যা রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে। এই রিজার্ভ থেকেই সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দেনা, ঋণ এবং পণ্য আমদানির খরচ মেটাতে পারে। রেমিট্যান্স দেশের মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, টাকার মান ধরে রাখতে এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে। এই অর্থ দিয়ে পরিবারগুলো জমি কেনা, বাড়ি নির্মাণ, কৃষিকাজে বিনিয়োগ বা ছোট ব্যবসা শুরু করে, যার ফলে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, কর্মসংস্থান বাড়ে এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য কমে আসে।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

অনেক শ্রমিক অবৈধ পথে বা যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার কারণে শোষণের শিকার হন। রেমিট্যান্স অর্থনীতি এখনও মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর, যা ওই অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাসের মাধ্যমে অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সুদূরপ্রসারী রোডম্যাপ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে আরও বিস্তৃত ও সুরক্ষিত করা যায়।

জাপানে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত এই নতুন চুক্তির কারণে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, সে বিষয়ে আপনার যদি কোনো জিজ্ঞাসা থাকে, তাহলে জানাতে পারেন।

জনপ্রিয়

স্বাধীনতার সুফল আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি : মামুনুল হক

রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে নতুন গতি

বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক: পাঁচ বছরে এক লাখ দক্ষ কর্মী নেবে জাপান

প্রকাশিত : ০১:১২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বাধীনতার পরপরই, ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এরপর থেকে জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এবং ঘনিষ্ঠ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন জোরদার হচ্ছে। জাপান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ এবং কৃষিপণ্য রপ্তানির একটি সম্ভাবনাময় বাজার। বিশেষত পোশাক এবং আইটি সেক্টরে জাপানে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সুযোগ রয়েছে। জাপান থেকে বাংলাদেশ উন্নত যন্ত্রপাতি, গাড়ি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও প্রযুক্তি আমদানি করে। জাপান বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা খাতে বড় অবদান রাখছে। প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষক জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পান। জাপানি ভাষা শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো এই সম্পর্ককে আরও গভীর করছে।

কর্মী নিয়োগে ঐতিহাসিক অগ্রগতি

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে জাপান সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখের বেশি দক্ষ কর্মী নেবে জাপান। জাপানের ৬৫টির বেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক ফেডারেশন, ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস (এনবিসিসি), এই কর্মী নিয়োগের সুবিধার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MOI) স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিআইটিপি) এবং স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার্সের (এসএসডব্লিউও) মতো কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন এবং কর্মসংস্থানের জন্য একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হবে। গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভসের (এনবিসিসি) ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এই অগ্রগতির বিষয়ে জানাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করে। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

 রেমিট্যান্সের গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।  প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ অর্থাৎ রেমিট্যান্স আজ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস, যা রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে। এই রিজার্ভ থেকেই সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দেনা, ঋণ এবং পণ্য আমদানির খরচ মেটাতে পারে। রেমিট্যান্স দেশের মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, টাকার মান ধরে রাখতে এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে। এই অর্থ দিয়ে পরিবারগুলো জমি কেনা, বাড়ি নির্মাণ, কৃষিকাজে বিনিয়োগ বা ছোট ব্যবসা শুরু করে, যার ফলে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, কর্মসংস্থান বাড়ে এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য কমে আসে।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

অনেক শ্রমিক অবৈধ পথে বা যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার কারণে শোষণের শিকার হন। রেমিট্যান্স অর্থনীতি এখনও মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর, যা ওই অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাসের মাধ্যমে অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সুদূরপ্রসারী রোডম্যাপ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে আরও বিস্তৃত ও সুরক্ষিত করা যায়।

জাপানে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত এই নতুন চুক্তির কারণে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, সে বিষয়ে আপনার যদি কোনো জিজ্ঞাসা থাকে, তাহলে জানাতে পারেন।