০৮:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

জোহরান মামদানির নিউইয়র্ক জয়

আল জাজিরা জোহরান মামদানির নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হওয়াকে কেবল একটি নির্বাচনী জয় হিসেবে নয়, বরং একে ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে জনগণের নৈতিক প্রত্যাখ্যান হিসেবে দেখছে। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি কুইন্স থেকে নির্বাচিত হয়ে নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং তিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করেন। আল জাজিরার মতে, তাঁর এই বিশাল জয় প্রমাণ করে যে নিউইয়র্কের ভোটাররা অর্থের ক্ষমতা, রাজনৈতিক এলিটদের ভুল ধারণা এবং দাতার প্রতি আনুগত্যকে প্রত্যাখ্যান করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই মামদানিকে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। প্রাইমারি নির্বাচনের পর রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া তাঁকে “গ্লোবাল জিহাদ”-এর সমর্থক বলে দাবি করেন, আর অ্যান্ড্রু কুওমো ইঙ্গিত দেন যে মামদানি “আরেকটি ৯/১১” উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত। আল জাজিরা এই আক্রমণগুলিকে ইসলামোফোবিক (মুসলিম বিদ্বেষী) কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে তাঁর বিশ্বাস এবং পরিচয়কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ধরনের আক্রমণের জবাবে মামদানি এক বক্তৃতায় বলেন যে, দ্বি-দলীয় রাজনীতি যখন কমে আসছে, তখন ইসলামোফোবিয়া যেন ঐকমত্যের কয়েকটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ঘোষণা করেন, “আর কখনও নিউইয়র্ক এমন শহর হবে না, যেখানে ইসলামোফোবিয়া নিয়ে বাণিজ্য করে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায়।”

মামদানি কেবল অভ্যন্তরীণ ইস্যুতেই নয়, বরং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বিষয়ে একটি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলকে স্থায়ী বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন এবং গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর এই প্রগতিশীল অবস্থানের কারণে তিনি বার্নি স্যান্ডার্স এবং আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করটেজের মতো জাতীয় পর্যায়ের প্রগতিশীলদের সমর্থন পান। এমনকি ইসরায়েলের সমালোচনাকারী প্রগতিশীল ইহুদি সংগঠন যেমন জিশ ভয়েস ফর পিস অ্যাকশন থেকেও তিনি সমর্থন পেয়েছেন।

মামদানির নির্বাচনী প্রচারণার মূল বার্তা ছিল ‘সাশ্রয়যোগ্যতা’ (Affordability)। তাঁর প্ল্যাটফর্মের প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে ছিল রেন্ট-স্টেবিলাইজড ইউনিটগুলিতে ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত করা, আরও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নির্মাণ করা, বাসের ভাড়া সম্পূর্ণ মওকুফ (Free Bus) করা এবং বিনামূল্যে শিশু যত্ন (Universal Childcare) প্রদান। এছাড়া, শহরের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দাদের উপর কর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও ছিল। এই তৃণমূল পর্যায়ের বার্তা হাজার হাজার নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে সাড়া ফেলে, যা অল্প পরিমাণে অনুদান এবং অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। আল জাজিরা এই জয়কে নিউইয়র্কের বৈচিত্র্যময় ভোটারদের পক্ষ থেকে বর্ণবিদ্বেষ ও অভিবাসন-বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখছে।

জনপ্রিয়

স্বাধীনতার সুফল আমরা ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছি : মামুনুল হক

জোহরান মামদানির নিউইয়র্ক জয়

প্রকাশিত : ০৩:৪৫:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫

আল জাজিরা জোহরান মামদানির নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হওয়াকে কেবল একটি নির্বাচনী জয় হিসেবে নয়, বরং একে ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে জনগণের নৈতিক প্রত্যাখ্যান হিসেবে দেখছে। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি কুইন্স থেকে নির্বাচিত হয়ে নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং তিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করেন। আল জাজিরার মতে, তাঁর এই বিশাল জয় প্রমাণ করে যে নিউইয়র্কের ভোটাররা অর্থের ক্ষমতা, রাজনৈতিক এলিটদের ভুল ধারণা এবং দাতার প্রতি আনুগত্যকে প্রত্যাখ্যান করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই মামদানিকে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। প্রাইমারি নির্বাচনের পর রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া তাঁকে “গ্লোবাল জিহাদ”-এর সমর্থক বলে দাবি করেন, আর অ্যান্ড্রু কুওমো ইঙ্গিত দেন যে মামদানি “আরেকটি ৯/১১” উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত। আল জাজিরা এই আক্রমণগুলিকে ইসলামোফোবিক (মুসলিম বিদ্বেষী) কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে তাঁর বিশ্বাস এবং পরিচয়কে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ধরনের আক্রমণের জবাবে মামদানি এক বক্তৃতায় বলেন যে, দ্বি-দলীয় রাজনীতি যখন কমে আসছে, তখন ইসলামোফোবিয়া যেন ঐকমত্যের কয়েকটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ঘোষণা করেন, “আর কখনও নিউইয়র্ক এমন শহর হবে না, যেখানে ইসলামোফোবিয়া নিয়ে বাণিজ্য করে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায়।”

মামদানি কেবল অভ্যন্তরীণ ইস্যুতেই নয়, বরং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বিষয়ে একটি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলকে স্থায়ী বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন এবং গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর এই প্রগতিশীল অবস্থানের কারণে তিনি বার্নি স্যান্ডার্স এবং আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করটেজের মতো জাতীয় পর্যায়ের প্রগতিশীলদের সমর্থন পান। এমনকি ইসরায়েলের সমালোচনাকারী প্রগতিশীল ইহুদি সংগঠন যেমন জিশ ভয়েস ফর পিস অ্যাকশন থেকেও তিনি সমর্থন পেয়েছেন।

মামদানির নির্বাচনী প্রচারণার মূল বার্তা ছিল ‘সাশ্রয়যোগ্যতা’ (Affordability)। তাঁর প্ল্যাটফর্মের প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে ছিল রেন্ট-স্টেবিলাইজড ইউনিটগুলিতে ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত করা, আরও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নির্মাণ করা, বাসের ভাড়া সম্পূর্ণ মওকুফ (Free Bus) করা এবং বিনামূল্যে শিশু যত্ন (Universal Childcare) প্রদান। এছাড়া, শহরের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দাদের উপর কর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও ছিল। এই তৃণমূল পর্যায়ের বার্তা হাজার হাজার নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে সাড়া ফেলে, যা অল্প পরিমাণে অনুদান এবং অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। আল জাজিরা এই জয়কে নিউইয়র্কের বৈচিত্র্যময় ভোটারদের পক্ষ থেকে বর্ণবিদ্বেষ ও অভিবাসন-বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখছে।