ডাঃ এজাজুল ইসলাম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং স্বাস্থ্যসেবা—দুটি ভিন্ন ক্ষেত্রে সমানভাবে সফল ও শ্রদ্ধেয় একটি নাম। তিনি মূলত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলেও, তার জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ কিংবদন্তি সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে অভিনয়ে তার আগমন এবং অসামান্য হাস্যরসাত্মক চরিত্রায়ন।
🌟 অভিনয়ের সূচনা ও ক্যারিয়ার
ডাঃ এজাজুল ইসলামের অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয় জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ-এর হাত ধরে। অভিনয় ছিল তার শখের জায়গা, যা একসময় তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
-
নাটকে আগমন: হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘সবুজ সাথী’ দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের অসংখ্য নাটক ও মেগা সিরিয়ালে অভিনয় করেন এবং তার স্বকীয়তা ও সহজ অভিনয় শৈলীর কারণে দর্শকের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন।
-
চলচ্চিত্রে অভিষেক: ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ক্লাসিক চলচ্চিত্র ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’-এর মাধ্যমে এজাজুল ইসলামের বড় পর্দায় আগমন ঘটে। পরবর্তীতে তিনি হুমায়ূন আহমেদের আরও বেশ কিছু সফল চলচ্চিত্র, যেমন—‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’ এবং ‘শ্যামল ছায়া’-তে অভিনয় করেন।
-
স্বীকৃতি: অভিনয়ে তার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি ৩৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে (২০১৪) ‘তারকাঁটা’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত হন।
সাধারণত, কমেডি ধাঁচের পার্শ্বচরিত্রে তার উপস্থিতি দর্শকের মাঝে এক আলাদা আনন্দ এনে দেয়। অভিনয়ের ক্ষেত্রে তিনি হুমায়ূন আহমেদকে তার সাফল্যের মূল কারণ হিসেবে সর্বদা উল্লেখ করেন।
🧑⚕️ চিকিৎসা পেশা ও ‘গরিবের ডাক্তার’ পরিচিতি
অভিনয়কে শখ হিসেবে গ্রহণ করলেও, ডাঃ এজাজুল ইসলামের মূল পরিচয় এবং পেশা হলো চিকিৎসা।
-
শিক্ষাগত যোগ্যতা: তিনি ১৯৮৪ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে নিউক্লিয়ার মেডিসিনে স্নাতকোত্তর (ডিএনএম) ডিগ্রি অর্জন করেন।
-
পেশাগত অবস্থান: তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং অবসর গ্রহণের পরও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন।
-
সেবামূলক মনভাব: অভিনয়ের তারকাখ্যাতি থাকা সত্ত্বেও, তিনি তার চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে কম ভিজিট নিতেন। এই কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত এবং শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, যতদিন তিনি চিকিৎসা পেশায় থাকবেন, ভিজিটের এই মূল্য তিনি আর বাড়াবেন না।
🔑 তাৎপর্য
ডাঃ এজাজুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন যে, একজন মানুষ দুটি ভিন্ন এবং সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পেশায় সফল হতে পারে। একদিকে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের মতো জটিল বিশেষজ্ঞ সেবা, অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ দর্শকের বিনোদনের দায়িত্ব—এই দুটি ক্ষেত্রে তার অসামান্য ভারসাম্য তাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনে এক বিরল ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















