০৫:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
এনসিপি'র চলতি সপ্তাহেই রাজপথে কর্মসূচি

‘জুলাই সনদে’ এনসিপি’র অনাস্থা: আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে গণপ্রতারণা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। শুধু তাই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা পুরো স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেই অনুপস্থিত ছিল। এনসিপি’র স্পষ্ট দাবি, এই সনদকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে না রেখে অবিলম্বে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এনসিপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, সনদের আইনি ভিত্তি না থাকায় এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে এক প্রকার ‘প্রতারণা’। দলটির যুক্তি নিম্নরূপ:

  • আইনি ভিত্তি ও বৈধতার অভাব: এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, সনদটিতে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এর কোনো উল্লেখ না থাকায় এর আইনি ভিত্তি অনুপস্থিত। আইনি বৈধতা নিশ্চিত না করে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না দিয়ে শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
  • জনগণের সার্বভৌমত্বের উপেক্ষা: এনসিপি মনে করে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনি ভিত্তি হতে হবে জুলাই অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ও সাংগঠনিক ক্ষমতা। কিন্তু সনদে সেই মৌলিক সত্য উপেক্ষা করা হয়েছে।
  • সংবিধানের ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ লঙ্ঘনের ঝুঁকি: সালেহ উদ্দিন সিফাত উল্লেখ করেন, সনদে সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে যা ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ লঙ্ঘন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
  • গণভোটের কাঠামো অনুপস্থিত: সব দল গণভোটে সম্মত হলেও সনদে গণভোটের আইনি কাঠামো বা বাস্তবায়ন আদেশের কোনো উল্লেখ নেই।
  • রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের বৈধতা: এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ জারির বৈধতা নেই। এ ধরনের আদেশ জারি করতে হলে এর বৈধতা নিতে হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে, যেখানে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটেছিল। তার কাছ থেকে আদেশ জারি হলে তা নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

এনসিপি তাদের তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর না করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, তারা রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থান বজায় রেখে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন, পাশাপাশি আইনি ভিত্তি আদায়ের দাবিতে চলতি সপ্তাহেই রাজপথে কর্মসূচি পালন করবেন।

এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যে কোনো মূল্যে আমরা আইনি ভিত্তি আদায় করব। যদি আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয়, তাহলে আমরা স্বাক্ষর করব না এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।”

সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের দল সনদে অংশগ্রহণ না করায় সরকার কিছুটা বিব্রত হয়েছে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এনসিপি’র জন্য অপেক্ষা করা হয়েছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এনসিপি’র উত্থাপিত দাবিগুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে এবং তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। মূলত এই দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার জন্যই ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে। সরকারের প্রত্যাশা, জুলাইয়ের প্রতি সম্মান রেখে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

এনসিপি জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশন আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানালে তারা তাতে অবশ্যই অংশ নেবে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব আশা করছে, অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পর্যন্ত জনগণের অভিপ্রায়কে ধারণ করে তাদের দাবি বিবেচনা করবে এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

জনপ্রিয়

‘জুলাই সনদে’ এনসিপি’র অনাস্থা: আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে গণপ্রতারণা

এনসিপি'র চলতি সপ্তাহেই রাজপথে কর্মসূচি

‘জুলাই সনদে’ এনসিপি’র অনাস্থা: আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে গণপ্রতারণা

প্রকাশিত : ১২:০৮:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। শুধু তাই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা পুরো স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেই অনুপস্থিত ছিল। এনসিপি’র স্পষ্ট দাবি, এই সনদকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে না রেখে অবিলম্বে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এনসিপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, সনদের আইনি ভিত্তি না থাকায় এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে এক প্রকার ‘প্রতারণা’। দলটির যুক্তি নিম্নরূপ:

  • আইনি ভিত্তি ও বৈধতার অভাব: এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, সনদটিতে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এর কোনো উল্লেখ না থাকায় এর আইনি ভিত্তি অনুপস্থিত। আইনি বৈধতা নিশ্চিত না করে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না দিয়ে শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
  • জনগণের সার্বভৌমত্বের উপেক্ষা: এনসিপি মনে করে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনি ভিত্তি হতে হবে জুলাই অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ও সাংগঠনিক ক্ষমতা। কিন্তু সনদে সেই মৌলিক সত্য উপেক্ষা করা হয়েছে।
  • সংবিধানের ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ লঙ্ঘনের ঝুঁকি: সালেহ উদ্দিন সিফাত উল্লেখ করেন, সনদে সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে যা ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ লঙ্ঘন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
  • গণভোটের কাঠামো অনুপস্থিত: সব দল গণভোটে সম্মত হলেও সনদে গণভোটের আইনি কাঠামো বা বাস্তবায়ন আদেশের কোনো উল্লেখ নেই।
  • রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের বৈধতা: এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ জারির বৈধতা নেই। এ ধরনের আদেশ জারি করতে হলে এর বৈধতা নিতে হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে, যেখানে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটেছিল। তার কাছ থেকে আদেশ জারি হলে তা নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

এনসিপি তাদের তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর না করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, তারা রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থান বজায় রেখে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন, পাশাপাশি আইনি ভিত্তি আদায়ের দাবিতে চলতি সপ্তাহেই রাজপথে কর্মসূচি পালন করবেন।

এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যে কোনো মূল্যে আমরা আইনি ভিত্তি আদায় করব। যদি আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয়, তাহলে আমরা স্বাক্ষর করব না এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।”

সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের দল সনদে অংশগ্রহণ না করায় সরকার কিছুটা বিব্রত হয়েছে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এনসিপি’র জন্য অপেক্ষা করা হয়েছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এনসিপি’র উত্থাপিত দাবিগুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে এবং তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। মূলত এই দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার জন্যই ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে। সরকারের প্রত্যাশা, জুলাইয়ের প্রতি সম্মান রেখে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

এনসিপি জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশন আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানালে তারা তাতে অবশ্যই অংশ নেবে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব আশা করছে, অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পর্যন্ত জনগণের অভিপ্রায়কে ধারণ করে তাদের দাবি বিবেচনা করবে এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।